আত্মপ্রকাশ পেল সাংবাদিকদের সংগঠন ‘জার্নালিস্ট ফর জাস্টিস (জে ফর জে)। এই সংগঠনের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্য পূরণ করা।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন আহ্বায়ক কাজী জেসিন।

সংবাদ সম্মেলনে কাজী জেসিন বলেন, বিগত প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশে অসংখ্য সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী নানা ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই নিপীড়িত সাংবাদিকদের প্রকৃত সংখ্যা আমরা কেউ জানি না। আবার শুধু সাংবাদিকরা নিজেরাই নন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে পর্যন্ত মামলা, হামলা এবং হয়রানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জেরে তাদের ওপর নেমে আসা নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে অনেক সাংবাদিককে দেশান্তরি হতে হয়েছে। বিদেশে বসে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কারণে সাংবাদিক তাসনীম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের, কনক সরওয়ার, শাহেদ আলম, মনির হায়দার ও এ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকের পরিবারের সদস্যরা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমার দেশ, দিগন্ত টিভিসহ অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বহু সংখ্যক সাংবাদিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের নির্যাতিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তারা যাতে যথাযথ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ পান তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ। একই সাথে আমরা বর্তমান সরকার এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সরকারের সময় যাতে করে পেশাগত কাজের কারণে সাংবাদিকরা নিপীড়নের শিকার না হোন এবং হয়ে থাকলে তারা যেন যথাযথ বিচার পান সে জন্য কাজ করে যাব।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ‘জে ফর জে’ যুগ্ম আহ্বায়ক আলফাজ আনাম, সংগঠনটির সদস্য জাহেদ চৌধুরী, অলিউল্লাহ নোমান, মারুফ মল্লিক এবং এহসান মাহমুদ।

জাহেদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনাগুলো এই ফোরামের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে। চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে আমরা সোচ্চার থাকব এবং সরকারসহ অন্যান্য অংশীজনের সাথে কথা বলে নিপীড়িত সাংবাদিকেরা যাতে যথাযথ বিচার পান তা নিশ্চিত করে আমরা নিরলসভাবে কাজ করব।

আমার দেশ পত্রিকার নির্যাতিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা শতাধিক মিথ্যা মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অলিউল্লাহ নোমান বলেছেন, ছাত্রদের ত্যাগের কল্যাণে আমরা আজ স্বাধীনভাবে কথা বলছি। তাদের ত্যাগ ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। এবং ব্যর্থ হতে না দিতে চাইলে আমাদেরকে সর্বত্র সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতে হবে। আগের সরকার আইনের তোয়াক্কা না করে বলপূর্বক বহু মিডিয়া হাউজ বন্ধ করেছে। ভবিষ্যতে কোন মিডিয়াকে কেউ যাতে বন্ধ না করতে পারে সে জন্য আমাদেরকে সক্রিয় হতে হবে।

মারুফ মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অতীতে সাংবাদিকতার জন্য কালো অধ্যায় শুরু হয় ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় থেকে। গত ১৫ বছরে তা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ওই সময়ে দলদাস সাংবাদিকতার নজির বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায় না। আমরা এই কালো অধ্যায় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকতার জন্য সুস্থ একটা পরিবেশ তৈরি লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই। আশার কথা যে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে মিডিয়ার সংস্কারের জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন।

এহসান মাহমুদ বলেছেন, আমি বিশেষভাবে নিপীড়িত সম্পাদক শফিক রেহমানের কথা বলতে চাই। এই বর্ষীয়ান সম্পাদককে ফ্যাসিবাদী সরকার যেভাবে ভুয়া মামলা দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে তা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের প্রশাসন সাংবাদিক বান্ধব নয়। নতুন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের পায়ের কাছে বসে থাকার সাংবাদিকতা বন্ধ করতে হবে।