নতুন বাজেটে স্থানীয় শিল্প, সম্ভাবনাময় পণ্য ও কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ ও ওষুধ সামগ্রীতে বিশেষ কর সুবিধা থাকতে পারে। একই সঙ্গে করোনা পরীক্ষার কিট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি, মাস্ক, সুরক্ষা পোশাকসহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু মেডিকেল পণ্য আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক মওকুফ সুবিধা অব্যাহত থাকতে পারে।
মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজের মতো সংযোজন শিল্প কাঁচামাল আমদানিতে যে ভ্যাট মওকুফ সুবিধা পায়, উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণে একই সুবিধা পেতে পারে স্থানীয় শিল্পগুলোও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত মার্চে ‘কভিড-১৯’ প্রতিরোধে কার্যকর ১৩টি পণ্যের সব ধরনের কর মওকুফ করে এসআরও জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। গত ২২ মার্চ জারি করা ওই এসআরওর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩০ জুন। তবে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর কর মওকুফ সুবিধা নতুন বাজেটেও অব্যাহত রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটের জন্য পাঠানো এক সুপারিশের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফরউদ্দিন বলেন, দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় আমাদের যেমন প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ওষুধ সামগ্রী সহজলভ্য করতে হবে, তেমনি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সম্ভাবনাময় শিল্পে কর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটে আমাদের পক্ষ থেকে সেসব সুবিধার বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন বাজেটে যে ১৩টি পণ্যের কর মওকুফ সুবিধা অব্যাহত থাকতে পারে তার মধ্যে রয়েছে : আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, কয়েক ধরনের টেস্টকিট, টেস্টকিট তৈরির কাঁচামাল, সার্জিক্যাল মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক, স্যানিটাইজার তৈরির উপকরণ ও চিকিৎসকদের সরঞ্জাম। জানা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করতে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল প্রয়োজন হয়। এই আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল আমদানি করলে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য দুই ধরনের টেস্ট কিটস এবং ডায়াগনস্টিক টেস্ট যন্ত্রপাতিতেও কোনো শুল্ক কর নেই। এ ছাড়া এই পণ্যের তালিকায় আছে তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক, প্লাস্টিক ফেস শিল্ডস, সার্জিক্যাল পোশাক, বিশেষ ওভেন স্যুট, মেডিকেল প্রটেকটিভ গিয়ার, সুরক্ষা চশমা, ডিসইনফেকটেন্টস। সূত্রগুলো জানায়, নতুন বাজেটে ওষুধ ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’-এর ভ্যাট মওকুফ হতে পারে। করোনা প্রতিরোধে এই ওষুধটি মানবশরীরে কার্যকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ বিভিন্ন হাসপাতালে ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করার শর্তে এই ওষুধটির ভ্যাট মওকুফের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় শিল্পে সুবিধা : করোনাকালে স্থানীয় শিল্পকে সুবিধা দিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমদানিকৃত কাঁচামালের কর মওকুফ ও কর যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি হচ্ছে স্টেনলেস স্টিল জাতীয় শিল্পের বেসিক কাঁচামাল হট রুল প্লেট। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্টিল ইন্ডাস্ট্রিকে কীভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে দেশের ইস্পাতশিল্পের অনেক বিকাশ ঘটেছে। এম এস রডের কাঁচামাল আমদানিতে কর সুবিধা রয়েছে। একইভাবে স্টিলশিল্পকে সহায়তার জন্য নতুন বাজেটে এর বেসিক ‘র’ ম্যাটিরিয়াল ‘হট রুল প্লেট’ আমদানিতে কর সুবিধা যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে কর সুবিধা দেওয়া হতে পারে হালকা প্রকৌশল পণ্যকে। বিশেষ করে যেসব শিল্প তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করবে সেগুলোর ভ্যাট মওকুফের সুপারিশ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। উদাহরণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞানবক্স উৎপাদন করা হচ্ছে। শিক্ষা উপকরণ হিসেবে এসব পণ্য স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের শর্তে ভ্যাট মওকুফ সুবিধা পেতে পারে। মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ তৈরির সঙ্গে জড়িত সংযোজন শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে দেশে পণ্য উৎপাদন করলে ভ্যাট অব্যাহতি পায়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছোট ছোট ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ অনেক প্রতিষ্ঠান এসব সংযোজন শিল্পে পণ্য সরবরাহ করলে তারা ভ্যাট অব্যাহতি পায় না। নতুন বাজেটে স্থানীয় এসব শিল্প থেকে উৎপাদিত পণ্যের ভ্যাট মওকুফ হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া লবণ শিল্পের জন্য ভ্যাট বৈষম্য দূর করারও সুপারিশ করা হয়েছে নতুন বাজেটে। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) মো. আবু রায়হান আল বেরুনী বলেন, খাবার লবণ হিসেবে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং শিল্প লবণ হিসেবে সোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে শিল্প লবণে ৩২ শতাংশ কর থাকলেও খাবার লবণে কর হার প্রায় ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া খাবার লবণ হিসেবে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি নিষিদ্ধ। এই কর বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে অনেকেই সোডিয়াম সালফেটের নামে সোডিয়াম ক্লোরাইড (খাবার লবণ) আমদানি করছে। এর ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে দুই ধরনের লবণ আমদানিতে করের হারে সমতা আনার সুপারিশ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন