বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় রূপ নেয়। বর্তমানে এটি পশ্চিম-উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

এরইমধ্যে জেলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে তিন লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এর পাশাপাশি তিনটি মুজিব কিল্লায় ৫৬০টি গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও ওষুধ। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, খুলনার দুর্বল বেড়িবাঁধগুলোর জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এই আবহাওয়ায় বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সতর্ক নজর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক অবস্থানসহ নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঝড়ের আশপাশে মেঘ ঘনীভূত হয়ে উপকূল এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে ঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাস, ভারি বৃষ্টি ও নদীতে পানির উচ্চতা বাড়তে পারে।

এদিকে বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবরের সকালের মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ওই সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ওড়িশা ও আশপাশের অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে বৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওডিশা বা পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে যেতে পারে। এর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদে যেতে বলা হয়েছে।