বাজারে পল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রায় সকল পণ্যই দাম। নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই, যার দামে স্বস্তি রয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে চাল, আটা, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ প্রায় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক সপ্তাহে ১২টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম তেল, চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, দারুচিনি, ধনে, গরুর মাংস ও ডিম।

ডিমের দাম নতুন করে বেড়েছে ডজনপ্রতি ১২ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম উঠেছে ডজনপ্রতি ১৮০–২০০ টাকায়। দর কমাতে বাজারে অভিযান শুরুর পর ডিম বিক্রিই বন্ধ রেখেছে কিছু কিছু আড়ত। এতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে, ফলে অনেক বাজারে ডিমই পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রভাবে দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের।

খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। এ নিয়ে এক মাসে বাড়ল ৪ টাকা। আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা, পেঁয়াজ ৫ টাকা এবং গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বাড়তি।

টিসিবির তালিকায় শাকসবজির দাম উল্লেখ থাকে না। যদিও এখন বাজারে সবচেয়ে চড়া দাম শাকসবজির। একেকটি শাকের আঁটি এখন ৩০-৫০ টাকা। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ টাকা থেকে শুরু। কোনো কোনো সবজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে সাতটি নিত্যপণ্যের দাম কিছু কিছু কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, মুগ ডাল, আদা, এলাচি, খাসির মাংস, দেশি মুরগি ও চিনি। এসব পণ্যের দাম আগেই অনেক চড়া ছিল। ফলে সামান্য কমলেও তাতে স্বস্তি ফেরেনি।

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কিছু পণ্য আমদানি ও শুল্ক–কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এর সুফল কতটা পাওয়া যাবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমদানি ও শুল্ক কমানোর পদক্ষেপগুলো নিতে দেরি করে ফেলেছে সরকার। বাজার পরিস্থিতি সামলাতে নতুন সরকারকে শুরু থেকেই উদ্যোগী হওয়া দরকার ছিল। যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর সুফল যাতে পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে নজরদারি থাকতে হবে।

ডিমের দাম বেড়েছে: চড়ামূল্যে মাছ-মাংস যারা কিনতে পারেন না, তাদের একমাত্র ভরসা ডিম। পুষ্টির চাহিদা মেটান ডিম দিয়ে। স্বল্প আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের বড় উৎসই হচ্ছে ডিম। সেই ডিমের দামও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পাশাপাশি নতুন সংকট হচ্ছে, পুরোনো কৌশলে বাজারে অভিযান চালাতে গিয়ে ডিমের সরবরাহব্যবস্থাতেই বিঘ্ন তৈরি হয়েছে। রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানে ডিম নেই। পাড়া–মহল্লার মুদিদোকানে ডিমের দাম ডজন ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডিমের দাম ও সরবরাহ নিয়ে আয়োজিত এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এখন থেকে ডিম উৎপাদক বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি ঢাকার আড়তে ডিম পাঠাবেন, মাঝখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এর ফলে পাইকারি বিক্রেতারাও সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করবেন।

সভায় কাজী ফার্ম, প্যারাগন, সিপিসহ বড় করপোরেট ব্যবসায়ী, খামারি এবং তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা। ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকের পর আড়তদারেরা জানান, তারা ডিম বিক্রি শুরু করবেন।