ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে এ খাত। অথচ বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বরাবরই মূলধারার বাইরে।

এ কারণে নানামুখী সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থের অপ্রাপ্তি, প্রশিক্ষণের অভাব, দক্ষতার অভাব, বিনিয়োগে ঘাটতি, রপ্তানি বাজারে অনুপ্রবেশের অক্ষমতা, নীতিসহায়তার অভাব ইত্যাদি।

বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের একই হারে গ্যাসের দাম নির্ধারণ এবং কয়েক দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। অতীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন খরচ যাতে কম বাড়ে সে দিকে নজর রাখা হতো। এখন তা হচ্ছে না।

উদ্যোক্তারা জানান, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

কারণ একই সময় কাঁচামালের দামও বেড়েছে। এই খাতে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৭৮.২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মূলত স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করে, পাশাপাশি রপ্তানিতেও কিছুটা ভূমিকা রাখে। পুঁজি কম এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ায় উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি মোকাবেলার ক্ষমতাও কম। ফলে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা রাখা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, তাঁরা যেসব কারখানা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে এখন আগের চেয়ে প্রতিটি কাঁচামাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁদের কারখানায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। বিপরীতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে সেভাবে পণ্যের দামও বাড়াতে পারছেন না তাঁরা।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি সূত্র জানায়, দেশে সিএসএমই খাতের উদ্যোক্তা ছিল এক কোটির ওপরে। করোনার কারণে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এই খাতে যদি গ্যাস ও বিদ্যুতে দাম না কমানো হয় বা ভর্তুকি দেওয়া না হয়, তাহলে সামনে আরো শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

এতে কর্মসংস্থানে বড় ধরনের আঘাত আসবে। তাই এখনই এই খাতকে বাঁচাতে পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে। সিএসএমই খাত জিডিপিতে অবদান রয়েছে ২৫ শতাংশের মতো। বর্তমানে শতাধিক পণ্য নিয়ে কাজ করছেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা। তার মধ্যে রপ্তানিমুখী বিভিন্ন পণ্য নিয়েও কাজ করছেন অনেক উদ্যোক্তা।

এসএমই ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে সারা দেশে তাঁদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা রয়েছেন প্রায় দুই লাখ। আরো চার-পাঁচ লাখ উদ্যোক্তাকে তাঁরা বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছেন।

পেপার কাপ : দোকান, রেস্টুরেন্ট বা ফুটপাতে চা, কফি পানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে ওয়ানটাইম পেপার কাপের ব্যবহার। পেপার কাপ ২০১২ সালে সর্বপ্রথম কেপিসি নামের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা বাংলাদেশে উৎপাদন শুরু করেন। এর আগে চাহিদার পুরোটাই আমদানিনির্ভর ছিল। বর্তমানে দেশের সব জায়গায় পেপার কাপ খুব প্রচলিত একটি পণ্য।

এই খাতে ২০ থেকে ২৫টি কারখানা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চার-পাঁচজন উদ্যোক্তা উৎপাদনে আছেন বলে জানান বাংলাদেশ পেপার কাপ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (পিসিএমএবি) সভাপতি এবং পেপার কাপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেপিসির চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান।

সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা এক পয়সাও দাম বাড়াতে পারছি না। কারণ সব পণ্যের দাম চাইলেই বাড়ানো যায় না। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ে এরই মধ্যে আমার কারখানা থেকে ৫০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। খরচ সামাল দিতে না পেরে কারখানার উৎপাদনও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

পিসিএমএবির সভাপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে মাসে ১৫-১৬ কোটি টাকার পেপার কাপ ব্যবহার হচ্ছে। দেশের বাজারে প্রতি মাসে পেপার কাপের চাহিদা ১০-১২ কোটি পিস। তার মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তারা সরবরাহ করছেন পাঁচ-ছয় কোটি পিস। বাকিটা আমদানি করে আনা হচ্ছে।’

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচ কমাতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা উৎপাদন বাড়াতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিভাবে উৎপাদন বাড়াতে পারেন, সে ব্যাপারে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা সক্ষম থাকতে হলে উৎপাদনশীলতা বাড়াতেই হবে। প্রণোদনা ও ভর্তুকিনির্ভর শিল্পায়ন কিন্তু শক্ত হয় না।

চামড়াজাত পণ্য : ‘পিপলস ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস’-এর স্বত্বাধিকারী রেজবিন বেগম। তিনি চামড়াজাত পণ্য জুতা, ব্যাগ, মানিব্যাগ ও বেল্ট উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন। সফল এই উদ্যোক্তা ২০২০ সালে পেয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের বর্ষসেরা পুরস্কার। ‘বাণিজ্য মেলা-২০২৩’-এ অংশগ্রহণ করে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কারখানা সচল রাখা নিয়ে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে আছেন বলে জানান এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।

রেজবিন বেগম বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের সঙ্গে সব কিছুই সম্পৃক্ত। প্রতিটি কাঁচামালের দাম ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেই তুলনায় বাজারে আমাদের পণ্যের মূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সাধারণ মানুষের বিষয়টি মাথায় নিয়েই আমাদের পণ্য উৎপাদন করতে হয়। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। তাই আমরা চাইলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই খাতের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া, যাতে এসএমই উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বিসিকের মাধ্যমে এসএমই ফাউন্ডেশন যে অর্থ দিয়ে থাকে সেটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন, যদিও পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যেভাবে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ার কথা সেভাবে পাচ্ছেন না।

এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ করছেন দেশের প্রায় ২৫ লাখ উদ্যোক্তা। তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ উদ্যোক্তা দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম : দেশে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদন করছেন দুই শতাধিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। অনেকে আবার উৎপাদন অর্ধেক কমিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন।

বাল্ব, সুইচ, ক্যাবলসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদন করছেন মুন্সীগঞ্জের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম এসকেআরপি।

তিনি বলেন, ‘পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ানো দরকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সেভাবে নেই। এ অবস্থায় পণ্যের দাম বাড়ানো হলে বিক্রি কমে যাবে। পণ্যের বিক্রি কমে গেলে অর্থসংকটে কারখানা চালানো সম্ভব হবে না। যার কারণে এখন আমাদের লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।’

নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এলসি খুলতে পারছি না। কাঁচামালের অভাবে ভালোভাবে কারখানা চালাতে পারছি না। এর মধ্যেই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা চালু রাখাই কঠিন হয়ে গেছে।’

নকশি কাঁথা : এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশেই নকশি কাঁথা তৈরি হয়। তবে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ফরিদপুর ও যশোর নকশি কাঁথার জন্য বিখ্যাত।

যশোর নকশি কাঁথা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মরিয়ম নার্গিস বলেন, ‘করোনাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা ক্ষতির মধ্যে ছিলাম। তার মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রভাবে আরো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। যেসব কারখানা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় তারা কাঁচামালের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়েছে। কিন্তু আমরা পাইকারি বা খুচরায় বিক্রি করতে গেলে বেশি দাম পাচ্ছি না।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন বলেন, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি নিরুৎসাহ করতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের শিল্পগুলোকে যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সুবিধা না দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা তো উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। তাহলে কিভাবে সিএসএমই খাত দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। সরকারকে গ্যাস ও বিদ্যুতে বিশেষ ভর্তুকি ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য হলেও দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ নারী ও যুব উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকীব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, সেই ক্ষতিই এখনো বেশির ভাগ উদ্যোক্তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলেও পণ্যের দাম বাড়াতে পারছেন না তাঁরা।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ৯০ শতাংশ ব্যবসা এবং ৫০ শতাংশের অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। তাদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৮ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা দেশের ৮৭ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এসব প্রতিষ্ঠান।

সরকার এ খাতের সুরক্ষায় এসএমই পলিসি ২০১৯ গ্রহণ করে, যার মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। কিন্তু অনেক লক্ষ্যই পূরণ হয়নি।

সমাধানের উপায়

বাংলাদেশে এসএমই খাতের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ অর্থপ্রাপ্তি। আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের আকার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে এসএমই খাতের জন্য দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যথাযথ কাগজের অভাবে অর্থপ্রাপ্তিতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসার ধারাবাহিক তথ্য না থাকায় এর অর্থনৈতিক বিন্যাস সম্পর্কে ধারণা করাও কঠিন হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘উৎপাদন সূচকের ক্রমাগত পতন সরাসরি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের আঘাত করছে। মূল্যস্ফীতি এবং অন্য সামষ্টিক অর্থনীতিক সূচকে পরিবর্তন আনতে সময় লাগলেও, এ খাতে ঋণ প্রবাহের দ্রুত উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।’

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রি-ফান্ডিং, পোস্ট ফান্ডিং এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সম্প্রসারণ কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে কিছুটা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আশাকরি সুদের হার দ্রুতই কমানো হবে।’ বলেন তিনি।

নতুন মুদ্রানীতির কারণে খাতটি সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেটের সীমাবদ্ধতা এ খাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। নতুন মুদ্রানীতির কারণে বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং উৎপাদন কমে যাওয়ায় কাজের মূলধনের অভাব দেখা দিয়েছে। এসএমই বাড়ানো ছাড়া অর্থনীতির বিকাশ হবে না।’

সমন্বয় জরুরি

এসএমই ফাউন্ডেশন পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, ‘সরকারি ১৭টি বিভাগ সরাসরি এসএমই খাতে সংযুক্ত। তারা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট নেয়, যা পাঁচ থেকে সাত বছর আগের পরিকল্পনা করা। সমন্বয়হীনতা ও আগের ধারণা থেকে প্রজেক্ট নেওয়ার কারণে অনেক সময় সরকারি অর্থ অপচয় হয়।’

এসএমই নীতিমালার উন্নতির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এসএমই নীতি পর্যালোচনার সুপারিশ রয়েছে। বর্তমান নীতিমালায় কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলে আগের লক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করা হবে।’

‘প্রতিবেশী দেশগুলোর মোট জিডিপির ৬০-৭০ শতাংশ এসএমই অবদান রাখে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের তিন ট্রিলিয়ন ডলার লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য আলাদা এসএমই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।’

রাশেদুল করিম এসএমইকে সহায়তার জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য পণ্যভিত্তিক পেশাদার প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘পণ্য ডিজাইন, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিকে সুসংহত ও সমন্বিত পদ্ধতিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।’

ব্যবসা সম্প্রসারণ

নতুন ব্যবসা শুরু করতে উদ্যোক্তারা নানাবিধ সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পুঁজি সংস্থাপন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ, কাঁচামাল প্রাপ্তি, বিপণন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েন।

জুটেক্সের (একটি পাটভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোগ) মালিক আকতারুজ্জামান তুষার বলেন, ‘আমি সব সময় পাটখাতে কিছু করার চিন্তা করতাম। কিন্তু আমি দক্ষ জনশক্তি খুঁজে পাওয়া এবং ঋণ সুবিধা পাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। যদি আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পাই, তাহলে আমাদের মতো আরও উদ্যোক্তা এ খাতে প্রবেশ করতে পারবে।’