মুহাম্মদ নাঈম: বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার অপর নাম ক্রিকেট। যখন ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের হয়ে খেলে তখন পুরো দেশ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। টাইগাররা যখন জিতে যায় ঠিক তখন পুরো বাংলাদেশ জিতে যায়। ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছেন অনেক তারকা। শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে প্রিয় খেলা মানেই ক্রিকেট। তাদের প্রিয়দের তালিকায় রয়েছেন অনেকেই। এরমধ্যে অন্যতম হলো- মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, তামিম ও মুশফিক।

এই পাঁচ ক্রিকেটারকে নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে আগ্রহের কোনও কমতি নেই। নেটিজেনরা সব সময় প্রিয় ক্রিকেটারদের ফলো করে থাকেন। অতি আগ্রহী হয়ে অপেক্ষায় থাকেন—কখন তাদের প্রিয় খেলোয়ারেরা নতুন কোনও সিরিজ জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নামবে, কিংবা গড়বে নতুন কোনও রেকর্ড। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে জানার আগ্রহের কমতি নেই। কার কবে জন্মদিন। কেউ নতুন কোনও রেকর্ড গড়ল কি-না। কিংবা কার সম্পত্তি কত?

এ সকল ক্রিকেটারদের জনপ্রিয়তা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই তারা বিপুল সম্পদেরও মালিক। তর্কের খাতিরে অনেকেই এগিয়ে রাখেন বস মাশরাফিকে। কেউবা এগিয়ে রাখতে চান তামিমকে। কারো কারো তালিকায় থাকেন সাকিব আল হাসান। এছাড়া কিছু নেটিজেনদের তালিকায় রয়েছেন মুশফিুর রহিম। অনেকেই মনে করেন সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতে চান সাইলেন কিলার মাহমুদুল্লা রিয়াদকে।

এই পাঁচ তারকার প্রত্যেকেরই রয়েছে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স। অর্থের বিচারে এই পাঁচ তারকার মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি ধনী? আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কার অর্থ কত?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: বাংলাদেশি ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক টেস্ট, ওয়ানডেতে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ছিলেন এবং বর্তমানে নড়াইল-২ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। এছাড়াও তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে নিযুক্ত আছেন। ইএসপিএন কর্তৃক পরিচালিত ওয়ার্ল্ড ফেইম ১০০ এ বিশ্বের সেরা ১০০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০টি উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে তিনি ৫ম বোলার। তার মোট সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

সাকিব আল হাসান: বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার ও বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং মাগুরা-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত সাকিবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার বলে গণ্য করা হয়। তিনি ইএসপিএন দ্বারা বিশ্বের ৯০তম বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্থান পেয়েছেন। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার অভিষেক হয়। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৭৪ কোটি টাকার কাছাকাছি।

তামিম ইকবাল: বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওপেনার তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালে তার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে এবং একই বছর প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন। তিনি ডিসেম্বর ২০১০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই তার সেঞ্চুরি রয়েছে এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান করেন।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এবং সেই সাথে রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম সনাথ জয়াসুরিয়ার করা ২৫১৪ রানের রেকর্ড ভেঙে একই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের অধিকারী হিসেবে নিজের নাম লেখান। তার মোট সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ: বিশ্বের সাইলেন্ট কিলার ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য তিনি। রিয়াদ অল-রাউন্ডার, কার্যকরী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং অকেশনাল অফ স্পিন বোলার হিসেবে দলে খেলছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় টি-২০ দলের সাবেক অধিনায়ক।

বাংলাদেশের পক্ষে ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি (১০৩) করার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এছাড়াও প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। তিনি ২০০৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য বাংলাদেশ দলে ডাক পান। ঐ সফরের তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে তার অভিষেক হয়।

এছাড়া ২০০৭ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত চার-জাতি সিরিজ এবং ২০০৭ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ স্কোয়াডের জন্য তাকে দলে নেয়া হয়। তার মোট সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

মুশফিকুর রহিম: বাংলাদেশ জাতীয় দলের তিন ফরম্যটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে অধিনায়ক ছিলেন। মূলত তিনি একজন উইকেটরক্ষক এবং মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান। ছোটখাটো গড়নের এই সদা হাস্যোজ্জ্বল খেলোয়াড়টি স্ট্যাম্পের পেছনে বকবক করার জন্য পরিচিত হয়ে আসছেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।

২০১৮ সালে নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে এর বিপক্ষে ২য় টেস্ট এ তার ও বাংলাদেশের হয়ে কোনো ব্যাটসম্যান এর হয়ে সর্বোচ্চ ২ টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আইসিসির টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক মর্যাদাপ্রাপ্ত স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত। ১০ম টেস্টখেলুড়ে দেশ হিসেবে ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি ওয়ানডে খেলুড়ে দেশ হিসেবে ওয়ানডে খেলে আসছে। ২০০০ সালের ২৬ জুন তারা দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে।