মাহমুদুর রহমান: ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, ও রাজনৈতিক ভাঁড়ের দল শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনকালে তার একচ্ছত্র ক্ষমতা গ্রহণপূর্বক এক রক্তপিপাসু, দানব শাসকে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় কয়েকটি দল এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক দলের মধ্যে জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), সাম্যবাদী দল (বড়ুয়া), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি উল্লেখযোগ্য। এসব দলের ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের সমর্থনকারী প্রধান রাজনৈতিক নেতারা হলেন,

১। হাসানুল হক ইনু
২। রাশেদ খান মেনন
৩। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
৪। রওশন এরশাদ
৫। দিলীপ বড়ুয়া
৬। গোলাম মোহাম্মদ কাদের
৭। নজিবুল বশর
৮। ফজলে হোসেন বাদশা
৯। শিরিন আখতার
১০। প্রয়াত মইনুদ্দিন খান বাদল
১১। প্রয়াত হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ

উপরোক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক যেমন, ইনু-মেনন গং চরম ইসলামবিদ্বেষী ধ্যানধারণা লালন করার ফলে আদর্শিকভাবেই তারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ও হিন্দুত্ববাদের উত্থানে সোৎসাহে সমর্থন জুগিয়েছে। বাদবাকিরা ষোল বছরের লাগামছাড়া দুর্নীতির সুবিধা নিতে এবং ভারত প্রীতির কারণে নির্লজ্জভাবে হাসিনার পদলেহন করে গেছে। প্রসঙ্গক্রমে এরশাদের জাতীয় পার্টির ভারতের প্রতি দাসসুলভ আচরণের দুটি উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে।

২০১৪ সালের নির্বাচন সকল বিরোধী দল বর্জন করেছিল। জনমতের চাপে প্রাথমিকভাবে এরশাদও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। দেশে তখন তুমুল সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। সারা দেশ প্রায় অচল। অবস্থা বেগতিক দেখে দিল্লির তৎকালিন কংগ্রেস সরকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে বিশেষ মিশনে ঢাকায় পাঠায়। সুজাতা সিং ঢাকায় এসেই এরশাদের সাথে দেখা করে তাকে তামাশার নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করে সফল হয়। ভারতের মদদে ভুয়া, একদলীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশে এক আজব সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় যেখানে জাতীয় পার্টি একাধারে সরকারের অংশ এবং সংসদে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে। এরশাদকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং রওশন এরশাদকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিরোধী দলীয় নেতা বানানো হয়। ভারতের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়।

জাতীয় পার্টির দিল্লির গোলামীর দ্বিতীয় উদাহরণ বেশ সাম্প্রতিক। গত বছর এরশাদের ভাই গোলাম কাদের হাসিনার অধীনে এক দলীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করবার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। সে অবস্থায় তিনি হঠাৎ ভারত সফরে যান। দিল্লিতে তিনি ভারতের কোন নেতার সাথে দেখা করেছিলেন এবং সাক্ষাতে কি আলোচনা হয়েছে সেগুলো জনগণকে জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, ভারতের অনুমতি ছাড়া সে সব কথা প্রকাশ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতা নাই, তিনি দিল্লির হিন্দুত্ববাদী সরকারের একজন পুতুল মাত্র! গোলাম কাদেরের এই বক্তব্য পরিষ্কারভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং চক্রান্তমূলক। বাংলাদেশের জনগণেরই এখন বিবেচনা করা উচিৎ যে, প্রকাশ্যে ভারতের কাছে গোলামীর স্বীকৃতি প্রদানের পর জাতীয় পার্টি এই দেশে কোন বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকতে পারে কিনা।

উপরে উল্লিখিত ফ্যাসিস্ট সহযোগী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। দেখতে পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ অন্যান্য মামলা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইনে খুন কিংবা খুনের সহযোগিতার সাজা অবশ্যই সর্বোচ্চ। তবে আমার বিবেচনায় ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লব নস্যাৎ করার লক্ষ্যে গণহত্যায় সহযোগিতার থেকেও অধিকতর গর্হিত অপরাধ এই ব্যক্তিরা করেছেন। তারা ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই হত্যা করেছিলেন। বিদেশী শক্তির এজেন্ট রূপে বাংলাদেশ নামক সার্বভৌম রাষ্ট্রটিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন এবং ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। এসকল অপরাধে বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা। সে সমস্ত মামলায় এরা দোষী সাব্যস্ত হলে বাংলাদেশে তাদের পরিচালিত দলগুলোর আর রাজনীতি করবার অধিকার থাকবে কিনা সেটি আদালত নির্ধারণ করবে।

উপরোক্ত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আরো কিছু রাজনৈতিক ভাঁড় বিভিন্ন সময়ে এবং প্রক্রিয়ায় দানব শেখ হাসিনাকে তার ষোল বছর ব্যাপী ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শাসন টিকিয়ে রাখতে এবং দীর্ঘায়িত করতে সহযোগিতা করেছে। তাদের নাম আমরা যেন সহজেই ভুলে না যাই সে জন্য ঐ ব্যক্তিদেরও একটি তালিকা নীচে দিলাম:

১। মেজর জেনারেল (অব:) ইবরাহিম
২। ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর
৩। শামসের মবিন চৌধুরী
৪। তৈমুর আলম খন্দকার
৫। কাদের সিদ্দিকী
৬। প্রয়াত নাজমুল হুদা ও তার পরিবার
৭। মাহি বি চৌধুরী
৮। শাহ মো: আবু জাফর
৯। মিসবাহুর রহমান চৌধুরী
১০। মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম
১১। প্রয়াত আবদুল লতিফ নেজামী

আমার স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় রাজনৈতিক ভাঁড়দের কারো নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঠকরা সেই নামগুলো যোগ করে নেবেন।

বাংলাদেশের জনগণের উপর অবর্ণনীয় জুলুম চালিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস করে দেয়ার প্রধান অপরাধী অবশ্যই রক্তপিপাসু, দানব চরিত্রের শেখ হাসিনা। তবে তাকে দানব হয়ে উঠতে যারা প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের অপরাধও কম নয়। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের পতনের পর আমরা তার বাকশালী স্বৈরশাসনের সহযোগীদের উপযুক্ত শাস্তি না দিয়ে যে ভুল করেছিলাম তারই কাফফারা জাতি ১৬ বছর ধরে দিয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার অসীম অনুগ্রহে আমাদের তরুণ সমাজ একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসককে কোন বিদেশী সাহায্য ছাড়া এক মহান বিপ্লবে উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছে। সেই বিজয় সংহত করতে হলে এবার আর আমাদের ভুল করলে চলবে না। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই, দিল্লির দালাল, দেশবিরোধীদের জনগণের সামনে চিনিয়ে দেয়ার জন্য আমার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবিপ্লবীরা কিন্তু বসে নেই। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব ফ্যাসিবাদের দালালদের চিহ্নিত করে তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। তাহলেই ষড়যন্ত্রকারীরা ইনশাআল্লাহ পরাভূত হবে।

সম্পাদক, আমার দেশ