আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রায় দুই মাসের অনিশ্চয়তার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ পেয়েছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে জাতীয় ঐক্য সরকার গড়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের অঙ্গীকার করেছেন।

প্রায় দুই মাস ধরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পর ফ্রান্সে অবশেষে সরকার গড়ার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিশেল বার্নিয়েকে সরকার গড়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অভিজ্ঞ এই রক্ষণশীল রাজনীতিক বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন বলে মাক্রোঁ আশা করছেন।

ফ্রান্সে আগাম সংসদ নির্বাচনে কোনো দল বা শিবির প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় বর্তমানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আপাতত ২০২৫ সালের বাজেট পাশ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।

চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ব়্যালি দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন আপাতত বার্নিয়ের মনোনয়ন সমর্থন করছেন। ফলে সংসদে ভোটাভুটির সময়ে তিনি কিছুটা ভরসা পেতে পারেন। তবে অভিবাসন ও নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে আরএন দলের সংশয় বিবেচনা না করলে ল্য পেন সেই সমর্থন প্রত্যাহারের প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন। দলের আরেক নেতা যত দ্রুত সম্ভব সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন ডাকার শর্ত আরোপ করেছেন। সে ক্ষেত্রে আগামী বছর জুলাই মাসেই সরকার ভেঙে দিতে হবে।

বার্নিয়ে নিজে এক স্থিতিশীল জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ভোটারদের অসন্তোষ যতটা সম্ভব দূর করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন শহর, শহরের উপকণ্ঠ ও গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ, কষ্ট, পরিত্যাগ ও অবিচারের অনুভূতি রয়েছে, সেই বিষয়গুলোকে তিনি গুরুত্ব দিতে চান। বার্নিয়ে সব রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য শুনে নীতি নির্ধারণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সের আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭৩ বছর বয়সী বার্নিয়ে সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাঁর পূর্বসুরি গার্বিয়েল আটাল ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্নিয়ে নিজের দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ২৭ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়ে জাতীয় ও ইউরোপীয় স্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কর্মরত ছিলেন।

ফ্রান্সের বামপন্থি শিবির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পায়নি। এই শিবির বার্নিয়ের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে। চরম বামপন্থি নেতা জঁ-লুক মেলাশোঁ বলেন, ফরাসি জনগণের কাছ থেকে এই নির্বাচন চুরি করা হয়েছে। তিনি শনিবার রাজপথে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনিসহ ইউরোপের অনেক নেতাকে বার্নিয়েকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাফল্য কামনা করেছেন। এবার তাঁকে বিভিন্ন শিবির থেকে মন্ত্রী নিয়োগ করে সংসদে সমর্থন প্রমাণ করতে হবে।