নিজস্ব প্রতিবেদক: মুষলধারা বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানঘেরা এলাকা নিউমার্কেট ডুবে গেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় সড়কের সব পানি প্রবেশ করেছে মার্কেটের ভেতর। ফলে দোকানে রাখা শাড়ি, কাপড়, বই, জুয়েলারিসহ অন্যান্য সবকিছুই পানিতে ভিজে গেছে। এমন অবস্থায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শুধু নিউমার্কেটই নয় বরং পার্শ্ববর্তী ধানমন্ডি নায়েম রোড, ঢাকা কলেজের আবাসিক এলাকা, আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন এলাকায় এখনও হাঁটু পানি। রাস্তায় ও গলিতে পানি জমে থাকার কারণে এসব এলাকার অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ। রাস্তায় চলাচল করতে ব্যবহার করতে হচ্ছে রিকশা।

একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকেও বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন, সামান্য পথ যেতে রিকশা বা ভ্যানে উঠে যেতে হচ্ছে। আর পনির কারণে বেশি সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। নিচতলায় থাকা অধিকাংশ দোকানেই পানি প্রবেশ করেছে।

এক ব্যবসায়ী বলেন, হঠাৎ এত বৃষ্টি হবে বুঝতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি এই অবস্থা। দ্রুত দোকানে এসে কিছু জিনিস সরাতে পেরেছি। আর অধিকাংশই পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বাইরে ফুটপাতে যেসব জিনিস গতকাল রাতে রেখে গিয়েছিলাম, তার সবই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। এগুলো রোদে শুকিয়েও ঠিক করা যাবে না। এখন কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

এক দোকান কর্মচারী বলেন, দোকানের নিচে যত কাপড় রাখা ছিলো বেশিরভাগই ভিজে গেছে। সব কাপড় বাসার ছাদে নিয়ে শুকাতে হবে। পানি এখনো কমেনি। কমার পর দোকান খুললে ভেতরের ক্ষয়ক্ষতি আরও বোঝা যাবে।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, সবগুলো দোকানের ভেতরেই এখন এক ফিট পরিমাণ পানি। বইপত্র, কাপড়, তৈজসপত্র, জুয়েলারি সবকিছুই পানিতে ভিজে গেছে। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল, যা টাকার অংক দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, দোকানের ডেকোরেশনের যে সব বোর্ড ব্যবহার করা হয় সেগুলো যদি পানিতে অল্প ভিজে তাহলে পুরোটাই পরিবর্তন করতে হয়। আজ দীর্ঘ সময় ধরে সেসব বোর্ডসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পানিতে ভিজছে। ভেতরে কী অবস্থা হয়েছে, তা পানি নামলে বলা যাবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি মঙ্গলবার মার্কেটের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়। এরপর সবাই আবার বোতল, প্লাস্টিকের কাপ, পলিথিন এগুলো ফেলে ড্রেন বন্ধ করে দেয়। ঢালাওভাবে সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনকে দোষ দেওয়া যাবে কিন্তু আমাদের নিজেদের অবস্থা কী সেটাও পর্যালোচনা করা উচিত। যতদিন পর্যন্ত নিজেরা সচেতন না হবো ততদিন এমন অবস্থার মুখোমুখি হতেই হবে। আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি টাকার অঙ্ক দিয়ে প্রকাশ করার মতো নয়। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতেও কয়েকদিন সময় লাগবে। একইসঙ্গে মার্কেটের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের জন্য অতিরিক্ত পাম্প চালানো হয়েছে।

অপরদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এই বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ। এর আগে প্রি-মনসুনে (বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে) ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ২৭ মে ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছিল।