বাজারে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ইলিশ মাছ। নেপথ্যে কারণ কি সিন্ডিকেট? বিগত ১৫ বছরে বাজার সিন্ডিকেট তৈরি করে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে একের পর এক দ্রব্যমূল্যে দাম বাড়তে থাকে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি স্বৈরাচার সরকার। ফলে খরচ ছাড়া দেশে উৎপাদন হওয়া ইলিশ মাছ কেন মানুষের নাগালের বাইরে থাকে? এমন প্রশ্ন জনমানুষের।

চলতি বছর দেশের উপকূলীয় নদ-নদীগুলোতে ইলিশ আহরণ বেড়েছে। তবে আহরণ বাড়লেও চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ইলিশ। মৎস্য অফিস বলছেন, জ্বালানি-রসদের দাম বৃদ্ধি, বৈরী আবহাওয়া ও বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকারের কারণে লাগামহীন দেশের ইলিশের দাম। তা ছাড়াও শহরের অনেক বিত্তবান সারাবছর খাওয়ার জন্য ইলিশ সংরক্ষণ করা, আহরিত ইলিশের একটি অংশ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়াটাও দেশে ইলিশের বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ।

মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় ইলিশের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। গত ৪ বছর আগে প্রতিকেজি ইলিশের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা। সে সময় দেশের নদ-নদীগুলোতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন ইলিশ আহরণ ছিল। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। এরপর থেকে আহরণ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইলিশ আহরণের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। মৎস্য অফিস বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলেরা পাঁচ লাখ ৭১ হাজার টন ইলিশ সংগ্রহ করেছেন। এটি ইলিশের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যানে ইলিশ আহরণ বাড়ার তথ্য মিললেও ভিন্ন কথা বলছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, আড়ৎ ও বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। ফলে বেড়েছে ইলিশের দাম।

শনিবার (১২ অক্টোবর) কারওয়ান বাজার মৎস আড়তগুলো ঘুরে একাধিক খুচরা ইলিশ বিক্রেতার সাথে দাম নিয়ে কথা হয় খবর সংযোগের। ব্যবসায়ীরা জানান, ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে থেকে ২০০০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর ছোট সাইজের অর্থাৎ ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা।

ইলিশ বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইলিশের দাম এখন সর্বোচ্চ। এর কারণে হচ্ছে সামনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সরবরাহের চাইতে খুচরা ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। ছোট-বড় প্রতিকেজি ইলিশ দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। অনেকের কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে ফিরে যাচ্ছেন।

আড়ৎদার ও পাইকাররা বলছেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের খোলা ডাকে ইলিশ বিক্রি করেন জেলেরা। আড়ৎদার-পাইকাররা মাছ কিনে বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে, নানান জটিলতায় বিগত বছরের থেকে এবার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

মাছ ক্রেতা মতিউর রহমান বলেন, বাড়ির সবারই পছন্দ ইলিশ। কিন্তু এবারও দাম চড়া। এক কেজির কিছু ওপরের একটা ইলিশ নিয়েছি। আর এ বছর কিনব না।

আহরণ বৃদ্ধির তুলনায় দাম চড়ার কারণ জানতে চাইলে ইলিশ গবেষক মো. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ আহরণের হিসাব ঠিক আছে বলেই মনে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এছাড়াও, ইলিশের সামাজিক মূল্যও অনেক বেশি।

তার ভাষ্য, সরবরাহ বাড়লে যেকোনো পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু, ইলিশের আবেগী মূল্য আছে। সব আয়ের মানুষের কাছে এর চাহিদা অনেক। কম আয়ের মানুষও ইলিশ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের চেষ্টা করেন।

দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত অল্প পরিমাণ রপ্তানির জন্য হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া উচিত নয়।

সরবরাহ-চাহিদার স্বাভাবিক হিসাবে ইলিশের দাম বিষয়ে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার জানান, ইলিশের আহরণ ভালোই আছে। এক বছর আগের তুলনায় ইলিশের চলতি দাম ৩৭ শতাংশ বেশি। বাণিজ্যিক জাহাজের সার্বিক খরচ বেড়েছে, তাই দামে প্রভাব পড়তে পারে।

দাম বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ্য করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ জানান, রপ্তানির খবরের পর দেশের কিছু জায়গায় ইলিশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু বাজারে ইচ্ছা করেই দাম বাড়ানো হয়েছে।