অস্থিরতা চলছে ডিমের বাজারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যটির দাম সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ডিমের হালিতে দাম ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ জন্য ক্ষুদ্র খামারি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বড় কারবারিরা পরস্পরকে দুষছেন।মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার দাম বেঁধে দিলেও বাজারে সে দামে ডিম মিলছে না।

ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, বাজারে ডিমের কোনো সংকট নেই। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বাজারে ডিমের সংকট রয়েছে। বৃষ্টিপাত ও বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সবজির ক্ষতি হওয়ায় ডিমের ওপর চাপ বেড়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে ডিমের চাপ কমবে।

পুরান ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা ফাইজান আহমেদ বলেন, গত মঙ্গলবার তিনি এলাকার ছাপরা মসজিদসংলগ্ন এক দোকান থেকে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫৫ টাকায় কিনেছিলেন। পরদিন ওই দোকানিই ৬০ টাকা দাম চেয়েছেন। ক্ষুব্ধ ফাইজান আহমেদ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ডিমের সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়েছে।’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা এখন প্রতিটি ডিম ১২ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি করছেন। দু-তিন দিন আগেও দাম ১২ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৭০ পয়সা ছিল। আরও কিছুদিন আগে বিক্রি করেছেন ১২ টাকায়।

বাজারে ডিমের দাম স্বাভাবিক রাখতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিমের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের আদেশে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির প্রতিবেদনই বলছে, খুচরা বাজারে অনেকটাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ডিম।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকির প্রতিবেদন অনুযায়ীই গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকায়। এতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহ আগেই তা ছিল ৫৩-৫৫ টাকা (তখনও প্রতিটি অন্তত ১৩ টাকা ২৫ পয়সা) হালি করে। এক মাস আগে দাম ছিল ৫০-৫৩ টাকা হালি।

পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য দেশের বড় খামারি ও রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘দেশে ডিমের কোনো অভাব নেই। ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে ডিমের উৎপাদন ২০ লাখ কম হলেও অন্যান্য জেলায় উৎপাদন বেশি রয়েছে। তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ী ও কর্পোরেটরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি আমানত উল্লাহ বলেন, ‘সারা দেশে দিনে ডিমের চাহিদা রয়েছে ছয় কোটি। তেজগাঁও এলাকায় বিক্রি হয় ১৪-১৫ লাখ ডিম। যারা এই ধরনের কথা বলে তারা প্রমাণ দেখাক।’

আমানত উল্লাহ বলেন, বাজারে সবজি ও মাছের সরবরাহ বাড়লে ডিমের ওপর চাপ অনেক কমবে। শীতের সবজি উঠলে আগামী নভেম্বরে ডিমের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, ডিমের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। ‘পিপলস পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় অনেক মুরগি মরে গেছে। এ ছাড়া মুরগির বাচ্চার অভাব রয়েছে। এসব কারণে মুরগি ও ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে। সারা দেশের ডিমের চাহিদা চার-পাঁচটি কর্পোরেটের পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব নয়।’

অন্যদিকে ক্ষুদ্র খামারিরা বলছেন, মুরগির খাবার ও বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করার সময় ক্ষুদ্র খামারিদের দূরে রাখা হয়েছিল।