কিডনি রোগ আমাদের দেশে একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এই রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব।
যে কাজগুলো প্রাকৃতিকভাবে কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে-
১. সীমিত লবণ গ্রহণ
খাদ্যে অত্যধিক লবণ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে, যা ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। লবণ গ্রহণ কমান এবং প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে মনোযোগ দিন। এই অভ্যাস কিডনি এবং সামগ্রিক কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
২. হাইড্রেটেড থাকা
সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে তা কিডনিকে কার্যকরভাবে টক্সিন ফিল্টার করতে এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ছাড়াও, কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বজায় রাখা। পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৩. সক্রিয় থাকা
নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ওজন, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এগুলো কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অলস জীবনযাপন স্থূলতা এবং কিডনি সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব কর্মক্ষম থাকুন।
৪. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
ধূমপান শুধুমাত্র রক্তচাপ বাড়ায় না বরং সরাসরি কিডনির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এবং কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান ত্যাগ করা কিডনির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি। ধূমপান এবং অ্যালকোহল কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য বিষাক্ত সংমিশ্রণ। যারা ধূমপান করেন এবং নিয়মিত মদ্যপানের অভ্যাস করেন তাদের কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকি নন-ড্রিংকদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। সুতরাং, সুনির্দিষ্ট কিডনির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ধূমপান এবং অ্যালকোহল উভয়ই এড়িয়ে চলা অপরিহার্য।
৫. ব্যথানাশক ওষুধ এড়িয়ে চলা
ব্যথানাশক ওষুধ ধীরে ধীরে কিডনির কার্যকারিতার ক্ষতি করতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ এড়িয়ে চললে কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়, বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আগে থেকে আছে তাদের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন গবেষণায় ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করাকে কিডনির জন্য বিপদের কারণ বলা হয়েছে, বিশেষ করে আইবুপ্রোফেনের মতো ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs), কারণ এগুলো দীর্ঘায়িত বা অত্যধিক ব্যবহার কিডনির কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। সমস্ত ওষুধ পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত এবং শুধু চিকিৎকের সুপারিশের পরে।
৬. উপসর্গ উপেক্ষা না করা
আপনি যদি প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন, প্রস্রাবের রক্ত, পায়ে প্রদাহ, গোড়ালি, মুখ, পেশীতে বাধা, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা ক্লান্তির মতো কোনো উপসর্গের সম্মুখীন হন তবে কিডনি ফাংশন পরীক্ষা করা উচিত। রোগটি দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়ে পৌঁছানো এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. অলস জীবনযাপন ত্যাগ করুন
সক্রিয় থাকা কেবল কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অলসতা স্থূলতা এবং অন্যান্য লাইফস্টাইল রোগের ঝুঁকি বাড়ায় যা কিডনি, লিভার এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক WHO-এর গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনি এবং সামগ্রিক শারীরিক কার্যকারিতার জন্য সক্রিয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সময়মত রোগ নির্ণয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কিডনি রোগ এবং তার অগ্রগতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিয়মিত স্ক্রীনিং প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনির সমস্যা সনাক্ত করতে, গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধ করতে এবং রোগীর ফলাফলের উন্নতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৮. একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখা
প্রক্রিয়াজাত খাবার কম এবং তাজা ফল, শাক-সবজি ও গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি খাবেন। এই অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগের প্রধান কারণ। হাইড্রেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি খাবারের দিকে খেয়াল দেওয়া উচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল এবং শাক-সবজি, যেমন মসুর ডাল, বেরি এবং শাক-সবজি কিডনিতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। কিডনির সুস্বাস্থ্যের জন্য রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়া উচিত এবং চিনি এবং লবণ খাওয়া সীমিত করা উচিত।