হাসান শান্তনু: ২০১৩ সাল। আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে তখন ‘নাস্তিক্যবাদ প্রশ্রয়’ দেয়ার কড়া অভিযোগ। বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতের।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরকে হজ করে আসার পাশাপাশি দোয়া-দরুদ মুখস্থ করে দলীয় সভায় বেশি বেশি আওড়ানোর নির্দেশ দেন দলপ্রধান শেখ হাসিনা।

ফেসবুকের স্ট্যাটাসে সুরা, হাদিস, ধর্মীয় কথা লিখতেও তাদেরকে নির্দেশ দেন তিনি। বামনেতারা ‘নাস্তিক’- কথিত এ প্রচারণাও দেশে আছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোটে কয়েক বকেয়া বামনেতা থাকায় তাদেরকেও গণভবনে ডাকেন শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ১৪ দলীয় জোটসঙ্গী দলের নেতা রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়াসহ কয়েকজন।

সরকারের বিরুদ্ধে ‘নাস্তিকতাকে প্রশ্রয়ের’ অভিযোগ দূর করতে বৈঠকে মেনন, ইনু সিদ্ধান্ত জানান, তাঁরা রাজনৈতিক হজ করতে শিগগিরই সৌদি যাবেন।

বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হওয়ায় দিলীপ বড়ুয়াকে বৈঠকে চুপ থাকতে হয়। অবশ্য তিনি বৌদ্ধধর্মের নামে রাজনৈতিক ভণ্ডামি করার কথা শেখ হাসিনাকে বলেনওনি। ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন, জাসদের ইনু হজ করেন।

আওয়ামী লীগের জন্য দোয়া করেন। হজ পালনকালে এহরাম বাঁধা অবস্থায় ফটোসেশন করে প্রমাণের চেষ্টা করেন, তাঁরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশিষ্ট মুসলমান। কোনো সরকারের বিরুদ্ধে ‘ধর্মবিরোধী’ বলে অভিযোগ ওঠলে সেই সরকারের মিত্র প্রগতিশীল নেতারা হজ পালন, ফটোসেশন করে এর জবাব দেয়ার ঘটনা মেনন, ইনু ছাড়া উপমহাদেশে আর কেউ ঘটাননি।

ওই অভিযোগের যুক্তিসঙ্গত জবাব আওয়ামী লীগের জোট মিত্ররা সেদিন দেননি। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও দেননি। এর বদলে তারা ধর্মের জাল আলখাল্লা পরেন। ফেসবুকে ‘বেশি বেশি ধর্ম প্রচারে দলীয়প্রধানের নির্দেশ পেয়ে’ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন ফেসবুকে ঘোষণা দেন, ‘মৃত্যুর পর তাঁর জানাজার নামাজে যেন বেশি মানুষ অংশ নেন, সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন’। অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নয়।

একটা পর্যায় থেকে শুরু হয় শেখ হাসিনাকে রাবেয়া বসরির (রহ.) মতো একজন নারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরার রাজনীতি। সংসদে বলা হলো, শেখ হাসিনার নামের আগে ‘হযরত’ বলতে হবে। যেভাবে দেশের মুসলমান হযরত আয়েশা (রা.), রাবেয়া বসরির (রহ.) নাম সাধারণত বলে থাকেন। নড়াইলের সন্ত্রাসী মওলানা রুহল আমিনকে আনা হলো হেফাজতের সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয়ার জন্য।

শেখ হাসিনা ‘বেহেশতি’, এটা প্রচারের জন্যও মওলানা ঠিক করা হয়। ‘ঘোষণা’ও আসে। বেহেশতে শেখ হাসিনার জন্য ‘ফ্ল্যাট বরাদ্দ’ বলে মন্ত্রিসভার এক সদস্য ‘ঘোষণা’ দেন। শেখ হাসিনা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন, ঢাকঢোল পিটিয়ে এর প্রচারণা চলে। আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশি ইসলাম’ বিকাশের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা অপচয় করে কথিত তথ্যচিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে।

‘আওয়ামী মুসলিম লীগের’ এভাবে ধর্মকে ব্যবহারের ফলে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা শিবিরের নেতাদেরকে আলাদা চিহ্নিত করতে পারেননি। ছাত্রলীগ হয়তো ধরে নিয়েছিলো, ধর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিবির-ছাত্রলীগ ভাই ভাই।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী