বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে কিশোর নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে কয়েকগুণ সতর্কতা বাড়িয়ে দেয়।

সীমান্তে তৎপরতা বাড়ানোর কারণে চোরাকারবারিরা তাদের পাচারের টার্গেট বদলেছে। আগে গরু, মাদক পাচারে জড়িতদের একটি চক্র এখন মানবপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশেষ ব্যক্তি ও জেল থেকে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামিরা এসব পথে ভারতে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। বিজিবি বলছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অপরাধী চক্রটি মানবপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে ধারণা তাদেরও। এ কারণে ৮৬ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা ও টহল জোরদার করেছে তারা।

সীমান্তবর্তী একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারিয়া, কান্তিভিটা, হাটখোলা ও বার ঘুরিয়ার বিপরীতে ভারতের থুকরা বাড়ি, পাটা গড়া এলাকার চোরাকারবারিরা মানব পাচারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই সব রুট দিয়ে টাকার বিনিময় পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের নারী-পুরুষসহ নানা বয়সের মানুষ।

গত ৯ সেপ্টেম্বর টাকার বিনিময়ে মানব পাচারকারীদের হাত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারেনি জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা গ্রামের কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ ও তার বাবা মহাদেব কুমার সিংহ। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয়েছে কিশোর জয়ন্ত কুমার। আহত হয়ে তার বাবা মহাদেব কুমার সিংহ ও দরবার আলী রংপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মুদি দোকানি পঙ্খিরাজ বলেন, ‘রাজনীতিবিদ ও কিছু সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এসব মানুষ বৈধ ও অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করতে চাচ্ছে। পাচারকারীরা এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে।’

আদিবাসী পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক দুলাল তিগ্যা বলেন, ‘দেশে একটা গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে অনেক মানুষ ভরসা পাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। এ দিকে সীমান্ত পথেও অবৈধভাবে মানুষ দেশত্যাগের চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবীর বলেন, ‘মানব পাচারের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে সীমান্ত এলাকা যেহেতু বিজিবির নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই অপরাধ প্রতিরোধ করার দায়িত্বও তাদের।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ঠাকুরগাঁও-৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজির আহমদ বলেন, ‘বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহতের ঘটনায় আমাদের ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। একটি চক্র টাকার বিনিময়ে মানবপাচারে জড়িত হয়েছে। এ জন্য সীমান্তে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারসহ প্রতিরাতে পেট্রল ডিউটি আগের তুলনায় তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। মানবপাচার রোধে বিএসএফও আমাদের তথ্য দিচ্ছে। আমরাও তাদের বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছি।’