ফেসবুক রিলস বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় কনটেন্ট। কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত এর স্থায়ীত্ব হয়ে থাকে। ফেসবুকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয় যেমন হাস্যরসাত্মক আধেয়, ভ্রমণ, ছোটখাটো টিপস, বিষয়ভিত্তিক ছোট উপস্থাপনা আকারে রিলস। বিনোদনের বাইরে অর্থ উপার্জনেরও দারুণ এক উপায় ফেসবুক রিলস।

রিলস থেকে লাখ টাকা আয়: ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়ছেন ঝোইয়া জামান। ২০১৯ সাল থেকে ফেসবুকের জন্য রিলস তৈরি করেন ঝোইয়া জামান। তখন হুট করেই একটি রিলসে ভাইরাল হয়ে যান ঝোইয়া। ২০২১ সাল থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত রিলস বানিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করেন তিনি। ফেসবুকে ঝোইয়ার অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজারের বেশি। প্রতি মাসেই গড়ে ৩০টির মতো রিলস শেয়ার করেন।

ঝোইয়া জানান, ‘লাইফস্টাইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, নতুন কোনো খাবার কিংবা আমার কাজের বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করি। রিলস থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। কোনো কোনো মাসে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকাও আয় করেছি।’ ঝোইয়া জামানের বিভিন্ন রিলস বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি ৩টি ভিডিওর দুটির ভিউ ১০ লাখের বেশি। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওর ৫০ লাখের বেশি ভিউ।

যেভাবে আয় করা যায়: ডিজিটাল মার্কেটিং বিশ্লেষক আরিফুল ইসলাম জানান, রিলস থেকে অর্থ আয়ের জন্য ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে। ভুল তথ্য বা অপতথ্য নিয়ে রিলস, আগ্রাসনমূলক বক্তব্য, সংঘাত বা সামাজিকভাবে বিতর্কিত বিষয়ে রিলস থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ নেই। ফেসবুকের ভিডিও মনিটাইজেশনের জন্য আপনার পাঁচ হাজার অনুসরণকারী আছে, এমন ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ থাকতে হবে। পেজ থেকে প্রকাশিত ভিডিও যদি এরই মধ্যে মোট ৬০ হাজার মিনিট (এক হাজার ঘণ্টা) দেখা (ওয়াচ টাইম) হয়ে থাকে, তাহলে আপনি মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। ফেসবুক প্রতি মাসেই নতুন নতুন ফিচার আনে ও নীতিতে পরিবর্তন করে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এখন লেখা ও ছবি থেকেও আয়ের সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে, যা পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। রিলস-ভিডিওসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে এই ঠিকানায়: https://www.facebook.com/business/learn/lessons/understand-monetization-eligibility-status

এ ছাড়াও রিলস ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে ফেসবুক। রিলসে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন থেকে ভিউয়ের জন্য অর্থ পেয়ে থাকেন নির্মাতারা। অনেক ইনফ্লুয়েন্সার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রিলসের মাধ্যমে অর্থ আয় করেন।

২০২৩ সাল থেকে ফেসবুকে ক্রীড়াবিষয়ক কনটেন্ট তৈরি করেন আবিদ হুসাইন সামি। তিনি জানান, ‘অন-ফিল্ড নামের একটি পেজ থেকে আমি বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করি। ভিডিওর টুকরো অংশ রিলস আকারে মাঝেমধ্যে শেয়ার করি। মাসে ৪০ থেকে ৪৫টা রিলস আমরা শেয়ার করি। ৯ লাখ ৭৬ হাজার ফলোয়ার আছে আমার পেজে। আমার পেজ থেকে মাসে আয় ২ থেকে ৩ হাজার ডলার। আর রিলস থেকে আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো।

যেসব রিলস জনপ্রিয়: সব রিলস সমান জনপ্রিয় নয়। কিছু বিষয়ের কনটেন্ট দ্রুত লাখো ভিউয়ের অঙ্ক পার হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা হয় বিনোদন ও হাস্যরস–সংক্রান্ত রিলস। বিভিন্ন মজার ক্লিপ, কৌতুক বা হাস্যকর মন্তব্য খুব দ্রুত সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ে। আবার ফেসবুক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন জিনিস তৈরির ভিডিও রিলসও বেশ জনপ্রিয়।

যেমন পুরোনো চাকা বা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজানোর মতো রিলস বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন রান্নার রেসিপি, বাড়ি সাজানোর টিপস বা রূপচর্চার বিভিন্ন হ্যাকসের ভিডিও–ও বেশ জনপ্রিয়। সৌন্দর্য, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল–সংক্রান্ত রিলসের আবেদন অনেক বেশি। বিউটি টিপস, মেকআপ টিউটোরিয়াল, ফ্যাশন স্টাইলিং আর হোম ডেকোর সম্পর্কিত রিলস অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চারের রিলসও বেশ জনপ্রিয়।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা করেছেন ইনফ্লুয়েন্সার শানায়া শাহনাজ। ২০২০ সাল থেকে তিনি ফেসবুক ভিডিও-রিলস শেয়ার করতে শুরু করেন। ২০২২ সাল থেকে পেশাদার ভিডিও ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কাজ করছেন। ইনস্টাগ্রামে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্যাশনসংক্রান্ত বিভিন্ন রিলস শেয়ার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নানা ধরনের ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আমি কাজ করি। বিভিন্ন রিলস কনটেন্ট থেকে মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার আয় হয়। যারা নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড বা স্টাইল ফলো করে, তারা আমার ভিডিও দেখে বেশি।’

একটা কাপড়কে ভিন্নমাত্রায় তুলে ধরার উপায় আমি ভিডিও ও রিলসে প্রকাশ করি। নতুন কাপড় ছাড়াও কীভাবে ফ্যাশন ট্রেন্ডি হওয়া যায়, সেটা রিলসে তুলে ধরছি। আমার সব ভিডিও নিখুঁত হয় না। বিভিন্ন ভিডিও তৈরিতে যেসব ভুলত্রুটি থাকে, তা আমি স্টোরি আকারে শেয়ার করি, যাতে সবাই বুঝতে পারে যে কাজটা নিখুঁতভাবে করা কতটা কঠিন। আমার রিলসের ভিউ ইনস্টাগ্রামের চেয়ে বেশি। কোনো কোনো ভিডিও কনটেন্ট কয়েক লাখ মানুষ খুব দ্রুত দেখে ফেলে আবার কোনো কোনো কনটেন্ট এনগেজমেন্ট বাড়তে কিছুটা সময় লাগে।

কিন্তু ভিউ জিনিসটা নিয়ে আমি কখনোই অতটা চিন্তা করি না। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অডিয়েন্সের সঙ্গে আমি কানেক্ট করতে পারছি কি না অথবা নতুন কিছু শেখাতে পারছি কি না। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েও নানা ধরনের রিলস কনটেন্ট তৈরি করছি। ভিডিওর মাধ্যমে আমি সাসটেইনেবল ফ্যাশন ধারণাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছি।

আমি চাই আমার দর্শক বুঝুক কীভাবে একই পোশাক বারবার পরা যায়, ঘরে থাকা জামাকাপড় পুনর্ব্যবহার করেও ফ্যাশনেবল হওয়া যায়। আমার কাছে এমন অনেক ভিডিও আছে, যেখানে আমি আমার মায়ের বা দাদির শাড়ি পরেছি। এসব ভিডিও রিলস মানুষ বেশি দেখে।’